মনজুর মোর্শেদ তুহিন (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি।
ভুয়া শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ ব্যবহার করে পটুয়াখালী পৌরসভায় অবৈধ নিয়োগ এবং রাষ্ট্রীয় অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে পৌরসভার সাবেক মেয়র ডা. মো. শফিকুল ইসলামসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
১৫ জুলাই ২০২৫ তারিখে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় (সজেকা), পটুয়াখালী থেকে মামলা (নং-০৩) দায়ের করেন কমিশনের সহকারী পরিচালক তাপস বিশ্বাস। মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে সাবেক মেয়র ডা. শফিকুল ইসলামকে। বাকি দুই আসামি হলেন পৌরসভার সহকারী অ্যাসেসর মো. দেলোয়ার হোসেন ও স্বাস্থ্য সহকারী সুমন হাওলাদার।
মামলার এজাহারে বলা হয়, মেয়র থাকাকালীন ডা. শফিকুল ইসলাম ক্ষমতার অপব্যবহার করে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র ও প্রতারণার মাধ্যমে পৌরসভার দুটি গুরুত্বপূর্ণ পদে অযোগ্য প্রার্থী নিয়োগ দেন।
সহকারী অ্যাসেসর হিসেবে নিয়োগ পান মো. দেলোয়ার হোসেন, যিনি দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের মিরপুর ক্যাম্পাস থেকে অর্জিত স্নাতক ডিগ্রির সনদ জমা দেন। কিন্তু উক্ত ক্যাম্পাস সরকার কর্তৃক অবৈধ ঘোষণা করা হওয়ায় তার সনদটিও অবৈধ হিসেবে গণ্য। এই ভুয়া সনদের ভিত্তিতে তিনি চাকরিতে নিয়োগ পান এবং দীর্ঘদিন দায়িত্বে থেকে সরকারের ২৮,৬২,৩২৪ টাকা আত্মসাৎ করেন।
অপরদিকে, স্বাস্থ্য সহকারী পদে নিয়োগ পান সুমন হাওলাদার, যিনি ছিলেন ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের ছাত্র। অথচ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এইচএসসি পাস প্রার্থীদের আবেদন চাওয়া হয়েছিল। সুমনের প্রয়োজনীয় যোগ্যতা না থাকলেও তৎকালীন মেয়রের প্রত্যক্ষ সুপারিশে তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়। পরবর্তীতে তিনি দায়িত্বে থেকে ২৫,৮১,৫৩৭ টাকা সরকারি তহবিল থেকে আত্মসাৎ করেন।
দুদক বলছে, দুইজন অযোগ্য প্রার্থীকে অবৈধভাবে নিয়োগ দিয়ে এবং রাষ্ট্রীয় বেতন-ভাতা গ্রহণ করিয়ে মোট ৫৪,৪৩,৮৬১ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে, যা সরাসরি জনগণের করের টাকায় পরিচালিত সরকারি তহবিল থেকে লোপাট।
তিন আসামির বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ১৮৬০ সালের ১০৯ (ষড়যন্ত্র), ৪০৯ (সরকারি অর্থ আত্মসাৎ) ও ৪২০ (প্রতারণা) ধারা এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭-এর ৫(২) ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
দুদক সূত্র জানিয়েছে, মামলার তদন্ত এখনও চলমান। প্রাথমিকভাবে তিনজনকে আসামি করা হলেও তদন্তে অন্য কোনো ব্যক্তি বা কর্মকর্তার সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
পটুয়াখালী পৌরসভায় দুর্নীতির এই চাঞ্চল্যকর মামলাটি স্থানীয়ভাবে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা বলছেন, এটি শুধু অর্থ আত্মসাতের ঘটনা নয়, এটি সরকারি প্রতিষ্ঠান এবং জনসেবার প্রতি চরম অবহেলার দৃষ্টান্ত। তারা দোষীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান।